এক কাপ চায়ের অপেক্ষা

এক কাপ চায়ের অপেক্ষা

Rating: 0.0 | Likes: 2 | Views: 32 | Shares: 0

ঘটনাটা একেবারেই সাধারণ, কিন্তু হৃদয়ে যে জায়গাটা রেখে গেছে, সেটা অসাধারণ।

মফস্বলের এক নিরিবিলি শহরে, এক বাঁকঘেঁষা গলিতে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান। নাম "মনপুরার চা"। দোকানের মালিক, ষাট ছুঁইছুঁই করিম চাচা, আর তার পাশেই প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটায় হাজির হয় অরিত্র। চাকরি করে না, লেখালেখি করে। চোখে চশমা, মুখে নরম হাসি, আর হাতে সবসময় একটা পুরোনো ডায়েরি।

আর প্রতিদিন ঠিক পাঁচটা বাজলে সে গলির ভেতর দিয়ে হেঁটে আসে মায়া। কলেজে বাংলা অনার্স পড়ে। খয়েরি ব্যাগটা কাঁধে, মুখে ক্লান্তির ছায়া, কিন্তু চোখে একরাশ কথা—যা সে বলে না, শুধু বহন করে।

অরিত্র প্রতিদিন তার জন্য একটা চায়ের কাপ বাড়তি রাখে।
কখনো মায়া বসে, কখনো বসে না।
কখনো একটা “হ্যালো” দেয়, কখনো নীরব চোখের হাসি।

তবু অরিত্র চা রাখে। প্রতিদিন।

একদিন বিকেলটা অন্যরকম। আকাশটা ধূসর, গরম চা'য়ের ধোঁয়ার মতো কুয়াশা জমে আছে চারপাশে।
মায়া আসেনি।

অরিত্র সেই চা'টা রেখে দিয়েছিল, কিন্তু বৃষ্টি পড়ার আগেই চা ঠান্ডা হয়ে যায়।

সে প্রথমবার ভাবল,
“আমি কি পাগল? প্রতিদিন একটা চা বানিয়ে রাখি, যার কোনো নিশ্চয়তা নেই?”

তারপর ঝট করে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না, এটাই তো ভালোবাসা। না পাওয়ার আশঙ্কা জেনেও অপেক্ষা করা।”

সে দিন ডায়েরিতে লিখল:

“চায়ের কাপটা যেন আমার মনের মতো। তুমি না এলেও আমি গরম রাখি—
যদি একদিন এসে বলো, ‘এক কাপ চা হবে?’”

মায়া এসেছিল, ঠিক দুই দিন পরে।
চোখের নিচে কালি, চোখের ভিতর অশ্রু।

“মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, হসপিটালে ভর্তি ছিল।”
শব্দগুলো যেন একেকটা গুলি, অরিত্রের বুকের ভিতর গেঁথে গেল।

কিন্তু সে শুধু বলল,
“তোমার চা’টা আজ একটু বেশি গরম। তুমি ঠান্ডা হলে খেয়ো।”

মায়া তাকিয়ে থাকে। নিঃশব্দে।

সেদিন প্রথম সে চা'টা শেষ করে, অরিত্রের ডায়েরির পৃষ্ঠায় তাকিয়ে দেখে লিখা আছে:

“ভালোবাসা কখনও দাবি করে না। শুধু অপেক্ষা করে—এক কাপ চায়ের মতো।”

(একটি সাধারণ অপেক্ষা... কিন্তু একেবারে আলাদা ভালোবাসা) ❤️??️

Comments

Please login to post a comment.

No comments yet.