গল্প: বাবার চায়ের দোকান

গল্প: বাবার চায়ের দোকান

Rating: 0.0 | Likes: 0 | Views: 19 | Shares: 0

ভোর ৫টা। শহরটা তখনো ঘুমিয়ে।

রেলস্টেশনের পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানে তখন ধোঁয়া উঠছে কেটলির মুখে। দোকানের মালিক, ৫২ বছর বয়সী মাধব কাকা, পকেটে গামছা গুঁজে কাপে চা ঢালছেন। তার মেয়ে, রিঙ্কু, তখন কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে।

রিঙ্কু ছোটবেলা থেকেই একটু অন্যরকম। তার চোখে সবসময় স্বপ্ন—ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথ এতটা সহজ ছিল না।

চারদিকে হাসাহাসি—“চায়ের দোকানির মেয়ে ডাক্তার হবে নাকি! ওসব বড়লোকদের ব্যাপার।” কিন্তু মাধব কাকা কখনো হার মানেননি। চায়ের দোকানটা সকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা—তারপর হোটেলে বাসন মাজার কাজ, কখনো কখনো রিকশাও চালান।

একদিন দোকানে বসে হঠাৎ রিঙ্কু এসে বলল,
“বাবা, আমি ফর্ম ফিল আপ করেছি। মেডিকেল এন্ট্রান্সের। আগামী মাসে পরীক্ষা।”

মাধব কাকা তখন একটা চায়ের কাপ হাতে ছিলেন। কাপটা থরথর করে কাঁপতে লাগল। চোখের কোণে জল এসে গেল।
“পড় এখন, খালি পড়। যা লাগে, আমি করব।”

পরীক্ষা হয়ে গেল। ফলাফল বেরোলো।

রিঙ্কু রাজ্যস্তরে প্রথম ৫০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিল।

চায়ের দোকানের সামনে লোকজন ভিড় করল। মিডিয়া এল। ছবি তুলল, হেডলাইন দিল—
“চায়ের দোকানির মেয়ে এখন ডাক্তারি পড়বে!”

কেউ একজন বলল,
“কাকা, আপনি কেমন করে এত টাকা জোগাড় করবেন?”

মাধব কাকা মাথা নিচু করে বললেন,
“আমি চা বানাই, লোকের মুখে হাসি আনি। এখন আমার মেয়েও মানুষের প্রাণ বাঁচাবে। তার জন্য যদি আমায় দশটা কাজ করতে হয়, আমি করব। কারণ ওর স্বপ্ন মানে আমার বাঁচা।”

চার বছর পর।

রিঙ্কু সাদা অ্যাপ্রন পরে বাবার দোকানে এল। প্রথম চাকরির দিন। হাতে একটা নতুন স্টেথোস্কোপ। বাবার হাতে তুলে দিল।
“বাবা, এই স্টেথোটা আমি তোমার নামে কিনেছি। কারণ তুমি না থাকলে এটা কখনোই আমার গলায় থাকত না।”

মাধব কাকা কিছু বললেন না। শুধু মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।

কেটলিতে তখনো জল ফুটছে। কিন্তু আজ সেই গন্ধে মিশে আছে গর্ব, আত্মত্যাগ আর একটা বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

গল্পের শিক্ষা:
স্বপ্ন কখনো গরিব-ধনী দেখে না। স্বপ্ন দেখে আত্মবিশ্বাস, সাহস আর ভালোবাসা। একজন বাবা তার মেয়ে বা ছেলের জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে পারেন—শুধু তাদের এগিয়ে যেতে দেখার আশায়।

এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কোনো তারকা নয়, কোনো রাজনীতিবিদ নয়—বরং সেই বাবা-মা, যারা মুখে কিছু বলেন না, কিন্তু ছায়ার মতো পাশে থাকেন।

Comments

Please login to post a comment.

No comments yet.