ফুরিয়ে যাওয়া পেনের কালি

ফুরিয়ে যাওয়া পেনের কালি

Rating: 0.0 | Likes: 0 | Views: 14 | Shares: 1

সকালবেলা আদালতের পরিবেশে আজ একটু অন্যরকম স্নিগ্ধতা।

বিচারপতি অরবিন্দ রায়ের টেবিল সাজানো, কফির কাপের পাশে রাখা তার প্রিয় পার্কার পেনটা—যেটা দিয়ে গত ৩৫ বছর ধরে তিনি কত শত সিদ্ধান্ত লিখেছেন।

কিন্তু আজকের দিনটা বিশেষ। আজ তার কর্মজীবনের শেষ দিন। আজকের পর আর কোনো রায় লিখবেন না, আর কোনো আদালতে বসবেন না।

অফিসের লোকজন সকাল থেকেই তাকে ঘিরে ব্যস্ত। কেক, ফুল, শুভেচ্ছাবার্তা—সবই যেন প্রস্তুত বিদায়ের জন্য।

কিন্তু অরবিন্দ বাবু নির্বিকার। চুপচাপ বসে রয়েছেন নিজের চেয়ারে, জানালার বাইরের রোদটাকে তাকিয়ে দেখছেন। তার চোখে ভেসে উঠছে সেই প্রথম দিন—যেদিন বাবার দেওয়া পেনটা হাতে নিয়েছিলেন, একটুও না ঘাবড়ে প্রথম আদেশটি লিখেছিলেন।

আজও তিনি একটি ছোট মামলার শেষ সিদ্ধান্ত লিখবেন। একটা বৃদ্ধ দম্পতির পেনশনের বিষয়ে সমস্যা। তেমন কিছু না, কিন্তু সেই বৃদ্ধ মানুষটি চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই তিনি আজ নিজে সিদ্ধান্ত লিখতে চেয়েছেন।

তিনি পেনটা তুলে নিলেন।

“সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো, সাত দিনের মধ্যে আবেদনকারী বৃদ্ধের পেনশন মঞ্জুর করা হোক...”

হঠাৎ করেই পেনটা আর চলে না।

তিনি একবার ঝাঁকিয়ে দেখেন। না, কালি শেষ। সেই মুহূর্তে যেন তার বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে ওঠে।

এই পেন দিয়েই তো বছরের পর বছর তিনি মানুষকে বিচার দিয়েছেন। কারও মুখে হাসি, কারও চোখে জল, কারও জীবনে নতুন সকাল—সবই এই একটুকু কালি দিয়ে।

তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।

সহকারী বলল,
“স্যার, আমরা নতুন পেন আনিয়ে দিই?”

তিনি মাথা নেড়ে বললেন,
“না, আর দরকার নেই। এই পেনটা যেমন, তেমনই থাক। আমার পক্ষে আর কিছু লেখা সম্ভব নয়। যেটুকু লেখা হয়েছে, সেটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়।”

তার চোখে একফোঁটা জল। মুখে একটা শান্ত, প্রশান্ত হাসি।

তিনি ধীরে ধীরে নিজের চেয়ারটা একবার হাত বুলিয়ে বললেন,
“আজ পেনের কালি শেষ নয়, এক জীবনের দায়িত্ব শেষ হলো।”

গল্পের শিক্ষা:
আমরা যত বড় পদে থাকি না কেন, একসময় সব কিছু শেষ হয়ে আসে। কিন্তু আমাদের কাজ, আমাদের সততা, আমাদের সহানুভূতি—এইগুলোই থেকে যায় মানুষের মনে।
একটা পেনের কালি শেষ হতে পারে, কিন্তু সেই পেন দিয়ে লেখা ইতিহাস, লেখা বিচার, লেখা মানবতা—তা চিরস্থায়ী হয়।

Comments

Please login to post a comment.

No comments yet.