গোয়েন্দা বিস্কুট পান্ডে

গোয়েন্দা বিস্কুট পান্ডে

Rating: 0.0 | Likes: 0 | Views: 15 | Shares: 0

বিরাট সাহেব ছিলেন একজন অত্যন্ত গম্ভীর মানুষ। এমন গম্ভীর যে, কেউ যদি জোক করত, তিনি ভাবতেন তাকে অপমান করা হয়েছে। মুখে কখনো হাসি নেই, চোখে সর্বদা সন্দেহ, আর কথায় একটাই রঙ—সিরিয়াস ধাঁচ।

অফিসের সহকর্মীরা মজা করে তাকে ডাকত "সিরিয়াস ভাই"। কেউ হাঁচি দিলে উনি বলতেন, "নির্ধারিত কাজের সময় হাঁচি না দেওয়াই শ্রেয়।" একদিন হঠাৎ অফিসে একটা মেইল এল—
"আমাদের অফিসে একজন গোপন চোর আছে। সে প্রতিদিন বসের ডেস্ক থেকে বিস্কুট চুরি করে খায়। আজ রাতেই তাকে ধরতে হবে।"

সবাই মেইলটা পড়ে হেসে উঠল। কারও মনে হলো, এটা নিশ্চয়ই কারো বানানো মজা। কিন্তু না, একমাত্র সিরিয়াস ভাই সেটা মনে করলেন না। তার চোখে আগুন, কানে গোয়েন্দার স্পর্শ। তিনি ঠিক করলেন, আজ রাতেই তিনি চোর ধরে ছাড়বেন।

সেদিন রাতে বিরাট সাহেব অফিসে থেকে গেলেন। বসের ডেস্কের পাশে লুকিয়ে চুপচাপ বসে রইলেন। গায়ে গামছা, মুখে চা-র গন্ধ, হাতে টর্চ, চোখে অতন্দ্র প্রহরীর দৃষ্টি। যেন এক বিশাল অপারেশনে নেমেছেন।

রাত প্রায় বারোটা। অফিস ঘর নিস্তব্ধ। হঠাৎ একটি ছায়ামূর্তি দেখা গেল দরজার কাছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে বসের ডেস্কের দিকে। বিরাট সাহেব রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে ফিসফিস করে বললেন, “এই তো ধরা পড়লি…!”

তিনি ঠিক সেই মুহূর্তে লাফিয়ে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সেই ছায়ার উপর।

“তুমি কে? চুরি করছো কেন? আমি সব জেনে ফেলেছি! বিস্কুট চোর!”

আলো জ্বালতেই মুখটা স্পষ্ট দেখা গেল। সেই চোর আর কেউ নয়, অফিসের প্রাণপ্রিয় পিয়ন শ্যামল কাকা।

শ্যামল কাকা থমকে গিয়ে বললেন, “আরে স্যার! আমি তো আমার ছাতাটা আনতে এসেছিলাম। আর বস তো নিজেই বলেন, মন চাইলে এখান থেকে বিস্কুট নিয়ে খেও।আমি তো সেই নির্দেশই পালন করছিলাম!”

সিরিয়াস ভাই যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কেবল দাঁড়িয়ে রইলেন থতমত হয়ে, মুখ হাঁ করা, মনে মনে ভাবছেন, “আমি তাহলে… একটা বিস্কুট নিয়ে এতকিছু করে ফেললাম?”

পরদিন সকালে পুরো অফিসে গল্পটা ভাইরাল হয়ে গেল। সবার হাসতে হাসতে পেট ধরল। কেউ বলল, “স্যার তো একদম গোয়েন্দা বিস্কুট পান্ডে!” আরেকজন বলল, “স্যারকে আজ থেকে 'বিস্কুট ইনভেস্টিগেশন ইউনিট'-এর হেড বানাতে হবে!” আবার কেউ মস্করা করে বললেন 'ডিটেকটিভ বিস্কুট বাবু' ।

বিরাট সাহেব তখন টেবিলের নিচে মুখ লুকিয়ে বসে আছেন, আর মনে মনে নিজেকে বলছেন, “সত্যিই আমি একটু বেশিই সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলাম…”

জীবনে কখনও কখনও এমন মুহূর্ত আসে, যখন একটুখানি হাসি, একটুখানি হালকা ভাব, পরিস্থিতিকে রক্ষা করতে পারে। না হলে একটা বিস্কুটের জন্যও মানুষ রাত্রিবেলা অফিসে লুকিয়ে পড়ে আর নিজেই হাসির পাত্রী হয়ে যায়।

সবকিছু সিরিয়াসভাবে নিলে জীবনও আমাদের প্রতি অতিরিক্ত কঠোর হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে জীবনকে হালকা করে নিতে হয়, হাসতে হয়, ঠাট্টা নিতে জানতে হয়।

Comments

Please login to post a comment.

No comments yet.