হারমোনিয়ামের হাহাকার

হারমোনিয়ামের হাহাকার

Rating: 0.0 | Likes: 0 | Views: 14 | Shares: 0

একটি হারিয়ে যাওয়া সুরের হৃদয়ছোঁয়া গল্প

কোথাও বাজছে না, কোথাও কেউ শুনছে না — তবু এক ঘরের কোণে পড়ে আছে একটি পুরনো হারমোনিয়াম। ধুলো জমে গেছে, কাঁটা কাঁটা লাগে হাত দিয়ে ছোঁয়ালে। কিন্তু এই কাঠের শরীরের ভিতরে আজও ঘুমিয়ে আছে একজোড়া সুর। সেই সুরগুলো একসময় ছিল শ্যামা দিদার জীবন।

শ্যামা দিদা ছিলেন এক সময়কার রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। রেডিওতে যাঁর কণ্ঠ ছিল সকালের প্রথম আলো, আর ক্লান্ত বিকেলের শেষ শান্তি। বিয়ের পরে গান থেমে যায়নি, বরং তার স্বামী অভিজিৎ ছিল তার সবচেয়ে বড় শ্রোতা। তারা একসাথে গান করত, সন্ধ্যায় হারমোনিয়াম খুলে—
"সখী ভালে বাসা কারে কয়..."

কিন্তু জীবন একদিন গানের খাতা ছিঁড়ে দেয়। অভিজিৎ হঠাৎ চলে গেল হার্ট অ্যাটাকে। তাদের ছোটো মেয়ে বিদেশে বিয়ে করে চলে গেল, আর ফেরেনি। সেই থেকে হারমোনিয়ামটা আর বাজে না। শ্যামা দিদা শুধু বসে থাকেন বারান্দায়, সাদা শাড়িতে, চোখে কাঁচের ফ্রেমের চশমা, আর ভেতরে জমে থাকা না বলা গান।

একদিন সকালে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় এক তরুণ— তার নাম শ্রেয়ান, একটি নতুন মিউজিক ফাউন্ডেশনের ছাত্র। সে জানে, এই বাড়িতে এককালে এক সংগীতশিল্পী থাকতেন।

দরজায় কড়া নাড়তেই দিদা ধীরে ধীরে এসে দাঁড়ান, শ্রেয়ান বলে, “আপনার হারমোনিয়ামটা কি এখনও আছে?”

শ্যামা দিদা চমকে ওঠেন। বহু বছর পরে কেউ জিজ্ঞেস করল তার প্রাণের যন্ত্রটির কথা।

হারমোনিয়ামটা আনা হলো। ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে সে বলল, “এইটায় আমার অভিজিৎ ছিল, আমার সন্ধে, আমার ভালোবাসা...”

শ্রেয়ান চুপ করে। তারপর ধীরে ধীরে হারমোনিয়ামে একটা সুর তোলে — একটা ভুলে যাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর।

শ্যামা দিদার চোখ থেকে জল ঝরে পড়ে। তাঁর হাত কাঁপে, তবু হারমোনিয়ামের বেলো টানেন, আর গাইতে শুরু করেন, বহুদিন পর—

“যা ছিল গোপনে, রবে তা অপমানে,
তবু প্রেম ফুরায় না, যায় না ভুলে...”

সেই সন্ধ্যায় শহরের এক কোণে আবার গান বাজে। শুধু সুর নয়, ফিরে আসে স্মৃতি। আর এক বৃদ্ধার মুখে ফের জেগে ওঠে আলো।

গল্পের শিক্ষা:
কিছু সুর কখনো পুরনো হয় না। ভালোবাসা ও স্মৃতি হারিয়ে যেতে পারে সময়ের ভাঁজে, কিন্তু এক মুহূর্তেই তারা ফিরে আসতে পারে— একটি স্পর্শে, একটি সুরে, একটি হৃদয়ে।

Comments

Please login to post a comment.

No comments yet.