পেন্ডুলামের চিঠি

পেন্ডুলামের চিঠি

Rating: 3.0 | Likes: 3 | Views: 95 | Shares: 2

পুরোনো ঘড়ির দোকান, নাম “সময়”。
দোকানটা শহরের অদ্ভুত এক কোণে, এমন এক গলিতে যেখানে আজকাল কেউ যায় না।
সেই দোকানে কাজ করে এক বৃদ্ধ — গিরিশদা, বয়স প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই।

সে মানুষকে নয়, ঘড়িকে সময় দেয়।
পেন্ডুলাম বদলায়, ব্যাটারি লাগায়, কখনো কখনো শুধু তাকিয়ে থাকে—একটা ঘড়ি থেমে থাকলেও যেন বোঝে, কোথায় ব্যথা।

একদিন, সন্ধ্যার আগে আগে, দোকানে আসে একটা নির্বিকার মুখ—একজন তরুণী, নাম ঈরা।

হাতে একটা পুরোনো কাঠের দেয়ালঘড়ি।
ঘড়ির কাঁচ ভাঙা, পেন্ডুলাম অচল, কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ঘড়ির ভিতর একটা চিঠি গুঁজে রাখা।

ঈরা বলে,
“ঘড়িটা আমার দাদুর। ওনার মৃত্যুর পর এটা খুঁজে পাই—চিঠিটা খুলিনি। আপনি ঠিক করে দিতে পারবেন?”

গিরিশদা চুপ করে থাকে।
তারপর ধীরে ঘড়ি খুলে চিঠিটা বার করে।
চিঠির খামের ওপর লেখা —

"যখন তুমি সময়ের কাছে পৌঁছাবে, তখনই খোলো।"

ঈরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
“মানে?”

গিরিশদা বলে,
“এই চিঠি আমি খুলতে পারি না। এটা আপনার জন্য, কিন্তু সময় ঠিক করবে, কখন।”

ঈরা প্রতিদিন আসে। ঘড়িটা ঠিক হয়ে গেছে, কিন্তু চিঠি খোলেনি।
প্রথম কয়েক দিন শুধুই চেয়ে থাকে।
তারপর একদিন, হঠাৎ সে জিজ্ঞেস করে,

“গিরিশদা, আপনার কখনো সময় থেমে গিয়েছিল?”

গিরিশদা হেসে বলে,
“হ্যাঁ, একবার।
যখন আমার স্ত্রী মারা যায়, ঘড়ির কাঁটা চললেও আমার ঘড়ি থেমে গিয়েছিল।”

ঈরার চোখের কোণে হঠাৎ অশ্রু।
সে বলে না, কিন্তু বোঝা যায় — ওর সময়ও কোথাও আটকে আছে।

ঈরা ধীরে ধীরে ঘড়ির দোকানে সময় কাটাতে শুরু করে। সে গান গায়, ঘড়ি পরিষ্কার করে, আর মাঝে মাঝে পুরোনো ঘড়িগুলোর কাঁটা ঘোরায়।

একদিন সে বলে,
“আমি মনোরোগ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করছি । কিন্তু নিজের মনকেই ঠিক রাখতে পারি না।”
গিরিশদা হেসে বলে,
“তাই তো মানুষ ঘড়ি ঠিক করতে আসে, সময় নয়।”

ঈরা হঠাৎ বলে,
“চিঠিটা আজ খুলব।”

গিরিশদা থামে, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

চিঠির ভিতর থেকে বের হয় একটি ছোট কাগজ।

লিখা আছে:

"যদি তুমি এই চিঠি খুলে থাকো, তবে বুঝি তুমি থেমে গিয়েছিলে।
জানো, সময় কখনো থেমে যায় না—আমরা থেমে যাই।
আবার শুরু কোরো। আমার সময় শেষ, তোমারটা এখনো শুরু হয়নি।
ভালো থেকো। – দাদু।”

ঈরার হাত কাঁপে। চিঠি কাঁদে না, সে কাঁদে।

Comments

Please login to post a comment.

bikash558465 (June 27, 2025)

Good