শেষ ফুচকার থালা

শেষ ফুচকার থালা

Rating: 0.0 | Likes: 0 | Views: 24 | Shares: 0

সন্ধ্যার শহরে একফোঁটা হাসি । কলকাতার গড়িয়াহাটে সন্ধ্যার পর যে হাওয়া বইতে শুরু করে, তার সাথে মিশে যায় ফুটপাথের কোলাহল, চায়ের ধোঁয়া আর ফুচকার ঝাল-তরকারির ঘ্রাণ। সেই ফুটপাথেই এক কোণে বসে থাকেন মধু দা—প্রায় ৬০ বছর বয়স, মাথায় সাদা চুল, কাঁধে গামছা, মুখে চিরাচরিত হাসি।

তাঁর ফুচকার স্বাদ এত বিখ্যাত যে লাইন পড়ে যায় সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু এক অদ্ভুত বিষয়—প্রতিদিন দোকান গোটানোর আগে তিনি একটা থালায় ৬টা ফুচকা সাজিয়ে রেখে যান পাশে, যেন কাউকে দিচ্ছেন, অথচ কেউ নেয় না।

একদিন অন্তরা নামে একটি কলেজ ছাত্রী সেই ফুচকা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল,
"মধু দা, রোজ শেষে আপনি যে থালাটা রাখেন, সেটার জন্য কেউ আসে না কেন?"

মধু দা হাসলেন।
"আসে না ঠিকই, কিন্তু আমি রেখে যাই। ওই থালাটা আমার মায়ের জন্য। ছোটবেলায় মা আমাকে ফুচকা খেতে দিত না। বলত, 'রাস্তাঘাটে খেলে পেট ব্যথা করবে'। এখন আমি নিজেই বানাই, আর প্রতিদিন একটা থালা মায়ের নামে রেখে দিই। ও তো এখন নেই, কিন্তু মন চায়—ও একদিন এসে বলবে, ‘খুব ভালো বানিয়েছিস রে, মধু’। সেই আশাতেই রেখে যাই।’

অন্তরার চোখে জল চলে এল। যে ফুচকা সে এতদিন খেয়েছে, সেখানে যে এতটা ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল, তা সে বুঝতেই পারেনি। মনে মনে বলে ,"সাধে কি মধুদার ফুচকার এত স্বাদ!"

একদিন সন্ধ্যায় এক বৃদ্ধা এসে দাঁড়ালেন ফুচকার দোকানের সামনে। মুখে অনাথ শিশুর মতো নির্ভর চোখ, বললেন,
"বাবা, শুনেছি তুমি প্রতিদিন একটা থালা রেখে যাও তোমার মায়ের নামে… আজ যদি আমাকে সেই থালাটা দাও, আমি নিজেকে একজন মা বলে ভাবব।"

মধু দা কথা হারিয়ে ফেললেন। চোখে জল, ঠোঁটে কাঁপুনি।
থালাটা এগিয়ে দিলেন তিনি।
"আজ আমার মা এসেছেন।"

গল্পের শিক্ষা
? ভালোবাসা কখনও হারায় না, সে খুঁজে নেয় তার নিজস্ব পথ।
? ছোট্ট কাজ, ছোট্ট ভালোবাসা—জীবন বদলে দিতে পারে।
? কোনো সম্পর্ক নিখুঁত না হলেও, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আমাদের আশ্রয় দেয়।

Comments

Please login to post a comment.

No comments yet.